জবি প্রতিনিধি : প্রতিটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্ম হয় নির্দিষ্ট ভৌগলিক এলাকার জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশা ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের গুরুদায়িত্ব নিয়ে। নানা প্রতিকূলতা ও সীমাবদ্ধতার মধ্যদিয়ে হাটিহাটি পা করে সেই বিশ্ববিদ্যালয় একদিন মহীরুহে পরিণত হয়, গোটা জাতির স্বপ্ন পূরণের বাতিঘরে রুপান্তরিত হয়। তবে কোন বিশ্ববিদ্যালয় কত দ্রুত বিকাশ লাভ করবে তা অনেকাংশেই নির্ভর করে সঠিক নেতৃত্বের উপর। কলেজ হিসেবে অনেক প্রাচীন হলেও বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে খুব নবীন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। অন্যান্য নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় অনেক বেশি প্রতিকূলতাকে জয় করেই এগুতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে। সাধারণত বিশাল উন্মুক্ত স্থান অধিগ্রহণ করে সমুদয় অবকাঠামো নির্মাণ করেই নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এই সুবিধা পায়নি। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ছোট্ট ভূখন্ড ও সীমিত সম্পদ নিয়েই বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের জন্য আধুনিক শিক্ষা সুবিধা নিশ্চিত করার চেষ্টা করতে হচ্ছে। ফলাফলস্বরুপ একসাথে ২টি কাজ করতে হচ্ছে, ১) একাডেমিক কার্যক্রম চালু রাখা, ২) অবকাঠামোগত সমস্যা নিরসনের চেষ্টা করা।
এতো সীমাবদ্ধতা সত্বেও খুব দ্রুত সময়েই বিশ্ববিদ্যালয়টি আজ বাংলাদেশের প্রথম সারির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে। আজকের এই অর্জনের পেছনে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারী সবার অবদান আছে। তবে এক্ষেত্রে একজন মানুষের যোগ্য নেতৃত্ব অনস্বীকার্য, যিনি নিভৃতে এই কর্মযজ্ঞের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন সুনিপুণ হাতে, তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান স্যার। একাডেমিক অথবা ননএকাডেমিক যেকোন সমস্যা সমাধানের জন্য স্যারের কাছে গিয়ে কেউ সহায়তা পাননি এমন নজির নেই। শত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি হাসিমুখে সবার কথা শুনছেন, সাধ্যমত সমাধান দিচ্ছেন। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠে পরিণত করার লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদী নানামুখী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন, যা বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাইকে নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। যারা অগবত নন তাঁদের জ্ঞাতার্থে তাঁর অসংখ্য কাজের মধ্যে মাত্র কয়েকটি উল্লেখ করছিঃ
১। যোগ্য, দক্ষ ও আন্তরিক শিক্ষক নিয়োগ ও যথাযথ তদারকির মাধ্যমে সুন্দর একাডেমিক পরিবেশ নিশ্চিত করণ। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে অবকাঠামোগতভাবে পিছিয়ে থাকা একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনে এগিয়ে নিতে গুণগতমানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগের বিকল্প নেই। সুতরাং এবিষয়ে তিনি কোন আপোষ করেন নি।
২। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দের জন্য উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ও গবেষণার পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা দৃশ্যমান। ইতোমধ্যে গবেষণায় বরাদ্দ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
৩। ২০/০৩/২০১৩ ইং তারিখ থেকে শুরু করে আজ অবধি দীর্ঘ সময়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ হয় নি (শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক হল আন্দোলনের সময় ব্যতীত )।
৪। শিক্ষার্থীদের হল আন্দোলন ( আবাসন সুবিধা নিশ্চিতকরণে সরকারের কাছে দাবী) ও মীজান স্যারের তৎপরতায় কেরানীগঞ্জে ২০০ একর জমিতে ২য় ক্যাম্পাস নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন। শিক্ষার্থীদের আবাসনসহ অন্যান্য চাহিদা পূরণের আন্তরিক চেষ্টা ও কাজ চলছে।
৫। ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যে কোন যোক্তিক দাবী পূরণে তিনি সর্বদাই সচেষ্ট থাকেন। সম্পূর্ণ তাঁর বিবেচনাধীনে (এখতিয়ারে) আছে এমন যৌক্তিক দাবী তিনি হাসিমুখেই মেনে নেন। আমরা সমাজকর্ম বিভাগ থেকে অসংখ্যবার বিভাগের উন্নয়ন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য গিয়েছি, কোনবার ব্যর্থ হয়ে ফিরেছি বলে মনে পড়ে না।
৬। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে তিনি শুধু শিক্ষা-গবেষণায় এগিয়ে নিচ্ছেন না বরং জগন্নাথকে কেন্দ্র করে শিল্প-সংস্কৃতির একটি বলয় তৈরি করার প্রয়াস নিয়েছেন। তাঁর সময়েই প্রতিষ্ঠিত নাট্যকলা, সংগীত ও চারুকলা বিভাগ এই কর্মযজ্ঞের নেতৃত্ব দিচ্ছে। মূলতঃ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্রান্ডিংটা শুরু তাঁর হাত ধরেই।
৭। এতোসব উন্নয়ন কর্মকান্ডের ফলাফলও পাচ্ছি আমরা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই! দেশের সরকারী-বেসরকারী সকল কাঙ্ক্ষিত চাকুরিগুলোতে আজ আমাদের ছেলেমেয়েরা স্বগর্বে জানান দিতে শুরু করেছে নিজেদের আগমনী বার্তা! ভালোলাগার বিষয় হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণাতেও আজ আমাদের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে যাচ্ছে।
৮। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে উপাচার্য মহোদয়দের সাক্ষাত পাওয়াও অনেক ক্ষেত্রে দুষ্কর বলে জানতে পাই সেখানে মীজান স্যারকে আমরা যে কোন প্রয়োজনে সার্বক্ষণিক পাই। প্রমোশনের ক্ষেত্রে দল-মত নির্বিশেষে তিনি সকল প্রার্থীর জন্য সমান ভূমিকা রাখেন। তাঁর সময়ে ভিন্নমত/আদর্শ ধারন করার কারণে কারো প্রমোশন আটকে গেছে এমন নজির জবিতে নাই!
৯। এদেশে পত্রিকার পাতা খুললেই যেখানে উপাচার্য মহোদয়দের নামে নানান নৈতিক পদস্খলনের খবর দেখতে পাওয়া যায় সেখানে মীজান স্যার সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। আজ পর্যন্ত তাঁর শত্রুও দাবী করতে পারবে না যে তিনি ১ পয়সার অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন! খুব অবাক হবেন শুনে ড. মীজানুর রহমান স্যারের সহধর্মিনী বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী নাজমা আক্তার ম্যাডামকে জগন্নাথের চারুকলা বিভাগের দায়িত্ব নেয়ার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু যোগ্যতা থাকা স্বত্ত্বেও স্যার ও ম্যাডাম দুজনেই এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন! যেন কেউ তাঁদের সততা নিয়ে প্রশ্ন করতে না পারেন! আজ পর্যন্ত জগন্নাথে তাঁর কোন আত্নীয় চাকুরি পান নাই! এরকম আরো শত শত দৃষ্টান্ত দেয়া যায়।
নানান অসংগতির ভিড়ে উজ্জ্বলতম ব্যতিক্রম একজন মীজান স্যার। তিনি একাধারে একজন দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ, দক্ষ প্রশাসক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সর্বোপরি সৎ ও নির্লোভ মানুষ। আপনারা যাচাই করে দেখতে পারেন ড. মীজানুর রহমান স্যার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে তাঁর উপর অর্পিত সকল দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছেন কিনা? এমন নিষ্ঠাবান একজন মানুষকে নিয়ে অনেককেই দেখলাম সমালোচনার ঝাঁপি খুলে বসেছেন! যার যা ইচ্ছা তাই বলে যাচ্ছেন! এটা কেমন বিবেচনা? ব্যক্তির কর্মকে মূল্যায়ন না করার সংস্কৃতিই আজ আমাদের জাতির অন্যতম মন্দ অনুষঙ্গ হয়ে দাড়িয়েছে দেখছি! একজন মানুষ নিজের পছন্দ-অপছন্দের কথা অকপটে জানিয়েছেন এটাই ভুল? নাকি তিনি যুবলীগ করা মানুষ এটা তাঁর অন্যায়? তাঁর সবকিছুই আপনার ভালো লাগতে হবে এমনটা বলছি না, সমালোচনারওতো একটা শালীনতা আছে, নাকি?
তিনি অনেক আগে থেকেই যুবলীগের রাজনীতি করেন, তাঁদের সময় যুবলীগের যে সুনাম ছিল সাম্প্রতিক সময়ে এই সংগঠনের কিছু নেতাকর্মীর লোভের কাছে সংগঠনটি ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে ও নাজুক সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমার কাছে মনে হয়েছে এই বিষয়টি তিনি মন থেকে মেনে নিতে পারেন নি, তিলে তিলে গড়া সংগঠনটিকে নষ্টের হাত থেকে বাঁচাতেই হয়তো বলেছেন “এখন সংগঠনটি (যুবলীগ) একটি সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এর ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হলে তা গ্রহণ করব”। এটা বলে কি তিনি বড় কোন পাপ কাজ করে ফেলেছেন? নাকি বিশাল কোন দূর্নীতি করে ফেলেছেন? বরং বাঙালির মধ্যে যে শঠতা, যে কপটতার জীবাণু প্রবেশ করেছে তিনি সেই পথ মাড়ান নি, মনের কথা, কষ্টের কথা সংবাদ মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। ভালো লাগা, না লাগা আপনার মর্জি। আর সবাইকে সবসময় খুশি কেন করতেই হবে? কেন সবসময় সার্বজনীন হয়ে ওঠার ব্যাপারে কৌশলী ভূমিকা নিতে হবে? মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতা থাকবে না? ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থাকবে না? সবার কাছেই অনুরোধ, প্লিজ আগে কারো সম্পর্কে পরিপূর্ণভাবে জানুন, পরে তাঁর সম্পর্কে কথা বলুন।
আমি মনে-প্রাণে একজন শিক্ষক, আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই ড. মীজানুর রহমান স্যার শিক্ষাখাতেই থাকুন, এদেশের শিক্ষাখাত এখনো এতোবেশি সমৃদ্ধ হয়ে উঠেনি যে মীজান স্যারদের দায়িত্ব শেষ। তাছাড়া আমি মনে করি রাজনৈতিক যেকোন পদবীর চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদটি অধিক সম্মানের। আমার চাওয়া তিনি তাঁর কাজের ধারাবাহিকতায় সফলভাবে উপাচার্যের দায়িত্ব শেষ করুন। ভবিষ্যতে যদি সুযোগ আসে তিনি এদেশের শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দেশের শিক্ষাখাতকে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিবেন এটাই প্রত্যাশা। স্যার, আমারা যারা আপনার সহকর্মী বা শিক্ষার্থী, যারা আপনাকে কাছ থেকে প্রতিনিয়ত দেখি তাঁরা জানি ড. মীজানুর রহমান কেমন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের আস্থা ও ভালোবাসা আপনার সাথে আছে সবসময়ই। আপনার যোগ্য নেতৃত্বে যে সুন্দর ও উন্নততর একাডেমিক পরিবেশ তৈরী হয়েছে, আশা করছি চলমান উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নের মাধ্যমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাবে শ্রেষ্ঠত্বের সোপানে, কাংখিত লক্ষ্যে।